সুরবীর স্যার ...
হ্যাঁ ঐ শিয়ালদার স্টার কোচিং এর, REASONING
& MATH করান না ... উনি । পড়ান খুবই ভালো, কিন্তু ওনার class গুলো সমীরণের
ঠিক ভালো লাগে না । ছোট বেলা থেকে পড়াশোনাই বেশ ভালই,মাধ্যমিক হোক বা উচ্চ মাধ্যমিক
স্কুলে প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে বরাবরই থেকেছে আর কলেজেও ফাস্ট ক্লাস কিন্তু টিকিয়ে
রেখেছিল। কিন্তু যাই হোক ওগুলো বাদ দিয়ে তো
আর গ্রুপ-এ EXECUTIVE হওয়া যায় না । তার ওপরে
PRELIMS, MAIN ক্লীয়ার করবার একটা চাপা চিন্তা তো কাজ করেই চলেছে মনে মনে ।তাছাড়া,
বেথুয়ার বাড়ি থেকে কলকাতা আশার সময় বাবাকে বড়ো মুখ করে বলে এসেছে যে, “ বাবা ... -
চাকরীটা আমাকে একবার পেতে দাও না, তখন তোমাকে কিন্তু আর রোজ সকালে উঠে ট্রেন ধরে কোলকাতায় বড়বাজারে শেঠ দের কাছে বাকবিতন্ডা করতে যেতে দেবো না আর ” । তাই চাকরীটা
ওকে যে পেতেই হবে । তা না হলে তার আরও যে স্বপ্ন গুলো রয়েছে মনের গভীরে সেগুলিও যে অধরাই থেকে যাবে । দূরেই থেকে যাবে তার ছেলে বেলার
সেই স্বপ্ন, যেগুলো কিনা এতো দিন ধরে সে আগলে রেখেছে মনের অতল প্রান্তরে ।
সে অনেক কালের ইচ্ছা, ছোটো বেলাতে যখন গ্রামে বাবার সাথে যাত্রাপালা দেখতে যেত
তখন থেকেই সেই সমস্ত যাত্রাপালা দেখতে দেখতে তার মনে অভিনয় জিনিসটার প্রতি একটা অন্যরকম
আবেদন তৈরি হয়। ক্রমে বয়স বাড়ার সাথে সাথে গিরিশচন্দ্র, উৎপল দত্ত এই সমস্ত প্রতিভাবান
মানুষদের নাটক পড়ার সাথে সাথে তার মনে নাটক সম্পর্কে একটা দুর্বলতা তৈরি হয়। ছোটবেলা
স্কুল থেকেই স্কুলের সব নাটকে পাঠ করা আর তারপর কলকাতায় এসে থেকে নিয়মিত অ্যাকাডেমি
অফ ফাইন আর্টস এ নাটক দেখার সাথে সাথে তার মনে বাসনা জাগতে শুরু করে যে একটা নাটকের
দল সে খুলবে । আর সেখানে সে সেই সমস্ত প্রতিভাদের সুযোগ করে দেবে যারা ছোট থেকে স্বপ্ন
দেখে, কিন্তু বাস্তবের চাপে করে সেগুলো বাস্তবায়িত করতে পারেনা। কিন্তু মুখে বললেই
তো আর একটা নাটকের দল খোলা যায় না। তার জন্য চাই যে অনেক টাকা-পয়সা মূলধনের। কাজেই
মধ্যবৃত্ত বাড়ির ছেলের পক্ষে সেই সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে গেলে যে একটা সরকারি
চাকরি পেতেই হয়, আর সেটাই সে ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছে। আরো স্বপ্ন আছে, চাকরিটা পেয়ে
গেলে একটা পাকা বাড়ি বানাবে আর তাদের থাকতে হবে না খড়ের ছাদের বাড়িতে। আর সাথে আপন
করে নেবে AISHEE কে। ঐশী নামটা নিতেই ঠোঁটের
কোনে একটু ঈষৎ হাসির ঝিলিক বয়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো সেই দিনটার কথা.... সেদিন কি কারণে
মোবাইল টা বের করে CONTACT টা খূলে ছিল আর এদিকে তখন
ঐশীর চোখ যায় ফোনে save করা তার ভুল বানান টার দিকে, কেননা ও নিজের বানান কেও ভুল লেখে
সেটা একদমই পছন্দ করে না, আর সেটা করেছিল তারই মনের প্রিয় মানুষ সমীরণ । প্রাথমিক উচ্চারণ
দোষে বাংলা ঐশী -র ENGREJI AISHEE এর জায়গায় OISHI করে বসে। আর তাতেই হয় বিপত্তি।
আর এই ভুলের খেসারতও সমীরণকে একটু গুনতে হয়েছিলো। সমীরণ তখন মিষ্টি করে আলতো আলিঙ্গনে
ঐশীকে বলেছিল পেস্ট্রি খাবি! ঐশী কৃত্তিম অভিমানের সুরে বলেছিল না - খাবোণা যা তুই।
নিতান্ত শিশুসুলভ তাই না! ঐশীর সাথে যখন প্রথম
আলাপ হয়, তখন ঐশী NEET পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
ও হ্যাঁ আলাপটা কি ভাবে... ( সেটাই তো বলা হয়নি এতক্ষণ, ) আলাপটা নিতান্তই আকস্মিক
বা কাকতালীয় বলা চলে। ও থাকতো পাশের মেস পাড়াতেই। কিন্তু চেনা শোনা কারোর মধ্যেই ছিল
না, এমনকি এখন তোমরা যাকে SOCIAL MEDIA তে MUTUAL FRIEND বলো, তেমন ভাবেও না। আর দুজনের বাড়ি, সেটা তো, বলতে গেলে
“একজন কাশ্মীর তো অন্য জন কন্যাকুমারী” । ঐশী একবার আমাকে বলেছিল, আমাকে কফি হাউস নিয়ে
যাবি, ওখানে আমি আগে কখনো যাইনি।...সে এক মজার ঘটনা, গুন গুন করে সেই বিখ্যাত গান, আরে ঐ যে “ কফি হাউসের
হুহুহু লালা লালা ... ” গানটা দু কলি গুন গুনিয়েই সেদিনই নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম সেই
আড্ডার গরম চুমুকে। সত্যি সেদিন ওর ঠোঁটের কোলে যে একটা নির্ভেজাল হাঁসির ঝিলিক দেখেছিলাম
তা আমি সারা জীবনে ভুলবো না কখনো! এর পর ওকে নিয়ে নন্দনের প্রথম সারিতে বসে সিনেমা
দেখা, ঢাকুরিয়া লেকে বেড়াতে যাওয়া... লেক !!!! আরে ঢাকুরিয়া লেক চিনলে না... !
আমাদের রবীন্দ্র সরোবর, আরো কতো জায়গায়, কোনো জায়গাই বাদ পড়েনি, তো সে PRINSEP ঘাট হোক বা বাগবাজার মায়ের ঘাট, Victoria হোক কিংবা দক্ষিণেশ্বর মন্দির। লোকে
অবশ্য বলে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে নাকি বিয়ের আগে জোড়া যেতে নেই, গেলে নাকি সম্পর্ক....
যাক সে কথা... ভাবনা থেকে হঠাৎ বাস্তব চিন্তায় ফিরে এলো ঘড়ীতে ঢঙ ঢঙ করে নটার ঘন্টা
পরার সাথে সাথে। কেমন জানি জীবনটা কত সুন্দর
মধুময় হয়ে যাবে, তাই না! শুধুমাত্র একটা চাকরি পাওয়ার উপরে যেটা আটকে আছে বাস্তবের
পরিহাসে। মাঝে মধ্যে বাস্তবের এই পরিহাসে মনে হয়, মনে হয় যেন...!! সব কিছু হারিয়ে ফেলবে
না তো, হারিয়ে ফেলবে না তো তার প্রিয় মানুষ টাকে । দেখতে দেখে দুটো বছর কেটে গেছে,
Aishee এখন NEET এ ভালো RANK করে ভালো একটা কলেজে ডাক্তারি পড়ছে, জীবনে ভালো একজন ডাক্তার হবে, এটা ভেবে মনে
যেমন একটা আনন্দ হলো ঠিক তেমনি একটা আসঙ্খার চাপা কালো মেঘ মনের মধ্যে ধনীভূত হলো এই
ভেবে যে “ হয়তো যদি কখনো হারিয়ে ফেলি ওকে”..! ভাবতে ভাবতে কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পরে।
শরীর টা অস্থির করতে থাকে, ক্রমে নিঃশ্বাস টা যেন বন্ধ হয়ে আসতে থাকে,, ঠিক তখনই একটা
গ্লাস পরে যাবার শব্দ;.. সাথে নিস্পাপ একটা মিও শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়, আর ঘুম ভাঙার
পরই সম্ভিত ফিরে এলে তার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে সে ঠিক সেখানেই অর্থাৎ কিনা ঐ বেলঘরিয়ার
Mission পাড়া মেসের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল এতক্ষণ,
আর সেই ঘুমের মাঝেই সে স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছিল। তথাপি সম্ভিত ফেরার পর বিছানা থেকে উঠে
কলশি থেকে জল নিয়ে এক গ্লাস জল খেয়ে টেবিলে
রাখা রিসিওনিং খাতাটার দিকে চোখ যায়, আর তার পাশে ফাইলে রাখা ADMIT কার্ড টা ডিম আলোয় চিক মিক করে ওঠে । যাতে লেখা আছে পরীক্ষাটা এবার পাশ করতেই হবে
করতেই হবে করতেই হবে… আর চাকরীটাও...