খাবার
পূর্ব দিনের প্ল্যান অনুযায়ী চয়ন আর অভিক দুজনে বাবুঘাটে মিট করে , এবং সেখান থেকে তারা দুজনে যাবে ভিক্টোরিয়াতে ।
চয়ন মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে কলকাতাতেই থাকে, অভিক থাকে মুর্শিদাবাদে । সেইখান থেকে এসেছে তার বন্ধুর সাথে ভিক্টোরিয়া একটু ঘুরে দেখবে বলে । তো, অভিকের যেহেতু কলকাতার রাস্তাঘাট প্রায়ই চেনা, তাই চয়ন ঠিক করে অভিকের সাথে বাবুঘাটে দেখা করে, সেখান থেকে যাবে ভিক্টোরিয়ার দিকে, আর সময় থাকলে উপরি পাওনা হিসেবে নন্দন, আর নন্দনের লাগোয়া মোহর কুঞ্জ । ঠিক তেমনি প্ল্যান অনুযায়ী দুইজনে বাবুঘাটে মীট করবার পরে সোজা একটু আগে হেঁটে এসে ঠিক ইডেন গার্ডেন্সের সামনে দিয়ে সোজা রাস্তা ধরে এগিয়ে যায় । এবং তারপর সেখান থেকে ধর্মতলা যাকে আমরা এসপ্ল্যানেডও বলে থাকি,সেখানে চমাথার মেট্রো সিনেমার কাছেই যে মেট্রো তে যাবার গেট টা আছে, সেটা ধরে তারা মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ করে। এরপর মেট্রো ধরে সোজা পৌঁছে যায় ময়দান স্টেশনে ।
এখান থেকে ভিক্টোরিয়া বলা চলে একদম পায়ে হাঁটা পথ । তো যেই বলা তেমনি কাজ । এদিকে ময়দান পৌঁছে তাদের খেয়াল হয় ঘড়িতে তখন প্রায় দুপুর 1:00 বেজে গেছে । এখন যদি কিছু খেয়ে নেয়া যায় তাহলে একটু ভালোই হয় । তৎক্ষণাৎ ঠিক হয় বাঙালির আপন প্রিয় বিরিয়ানি তাই যেন ঠিক হবে। তাই সাথে সাথে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ থেকে দু প্লেট চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার করে ফেলে অভিক , অ্যাড্রেস হিসেবে লোকেশন দেয় মোহরকুঞ্জ এর ঠিক ফ্রন্ট গেটে ।কবি কিছুক্ষণ পর বিরিয়ানি এসে তাদের কাছে পৌঁছায় । কিন্তু এটুকু সময়ের মধ্যে তারা একবার নন্দনে ঢুঁ
মারার চেষ্টা করে । কিন্তু ওই যে কপাল
খারাপ হলে যা হয় । একদম নন্দনের গেটের
মুখের সামনে গিয়েও নন্দন টা তাদের দেখা হয়ে ওঠে না, কেননা ঠিক সেই সময়েই মোবাইলে রিং টা বেজে ওঠে , আর অপরপ্রান্ত থেকে একটা বাঙালি কণ্ঠস্বরে কেউ একজন বলে ওঠে, হ্যালো স্যার আপ কাঁহা পে হো ? মে তো আপকা লোকেশন মে খাড়া হু। অভিকের এই অবাঙালি কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে অসুবিধা
হয় না যে এটি সেই ফুড ডেলিভারি বয়ই তাকে ফোন করেছে । অভিক সাথে সাথে তাকে
ভাঙাচোরা হিন্দিতে উত্তর দিয়ে বলে , হাম বগল মেহ হি
হে, আপ থোড়া 2 মিনিট রুকিয়ে , হাম আ রাহা হায়।
অতঃপর ডেলিভারিটা নিয়ে বিল পেমেন্ট করে রাস্তার ধারেই একটা বাসস্ট্যান্ডের কাছে তারা বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে খেতে শুরু করে । কিছুটা খাওয়া হয়ে গেছে ঠিক সেই সময় হঠাৎ অভীকের একটু
হেঁচকি উঠে যায়
কেননা প্রতিবার বিরিয়ানি খাবার সময়েই ওর হেচকি উঠে যায়, শুকনো খাবারটা ও ঠিক খেতে পারে না ।
অতপর অভীকের একটু খেতে বিলম্ব হয় । এদিকে চয়নের খাওয়া প্রায় শেষ। ঠিক সেই সময় হাতে কয়েকটা গোলাপ নিয়ে একটা ১০-১২ বছরের মেয়ে, এসে বলে দাদা....
নাহ ... দাদা গোলাপ নেবে না !!! দাদাহ খিদে পেয়েছে একটু দাওনা ।
চয়নের যেহুতু খাওয়া প্রায় শেষ তাই সে ব্যাপারটার মধ্যে অতটা তাকাইনি । দু-একবার তাকে বলে, যা চলে যা, আর নেই।
কিন্তু অভীকের যেহুতু খাওয়া হয়নি, বলতে গেলে অনেকটা খাবার তখনও প্যাকেট এর মধ্যেই রয়েছে, তাই সে বলে, নাহ্
চলে যা, দেবনা ।আবার পরক্ষণেই মেয়েটা যখন বলে ওঠে, দাদা খুব খিদে পেয়েছে, একটু দাও না। তখন অভীকের
মনে ইতস্ততঃ শুরু হয়। সে একবার ভাবে খাবারটা দিয়ে দেবে , কিন্তু
পরক্ষনেই ভাবে এই এটো খাবারটা দিয়ে কি
হবে, তার ওপরে অনেকটাই আমি খেয়ে ফেলেছি ।
সে মেয়েটিকে বলে, চল
তোকে নতুন খাবার কিনে দিচ্ছি। কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই রাজি হয়না । বলে
না দাদা, আমাকে এই খান থেকেই দাও না।
কিন্তু অভিক
কিছুতেই দিতে চায় না।
সে বার বারই বলে চল
তোকে নতুন খাবার কিনে দিচ্ছি, এই এটো খাবার তোকে খেতে হবে না। কিন্তু মেয়েটা
এদিকে নাছোড়বান্দা । সেই খাবার তাই নিয়ে ছাড়বে। ক্রমে অভিক একটু বিরক্ত হয়ে ওঠে।
কিন্তু আবার মনের
মধ্যে কেও যেনো বলতে থেকে দিয়ে দে না, এতবার করে যখন, খিদের জন্যই তো তোর কাছে
এতবার করে চাইছে।
এই রকম ইতস্তত এর
পরে মেয়েটি যখন একদমই নাছোড়বান্দা, তখন অভিক বাধ্য হয়ে কিছুটা অনিচ্ছার সর্তেও বলতে
গেলে মেয়েটিকে বিরিয়ানির প্যাকেটটা ধরিয়ে দেয়, এবং এগিয়ে যায়
উত্তরের ভিক্টোরিয়ার দিকের রাস্তাটার দিকে।
ক্রমে খাবারটা নিয়ে
মেয়েটা কি করলো সেটা দেখার জন্য অভিক দুবার পেছন দিরে তাকায়। এবং দেখে মেয়েটি
খাবারটা যেনো গোগ্রাসে গিলে নিচ্ছে।
দেখে অভীকের মনে একটু কষ্ট হয়। কিন্তু অভীক মনে মনে এটাও ভাবতে থাকে, আমি মেয়েটাকে ভালো
খাবার কিনে দেবার প্রস্তাব দিলেও,কেনো মেয়েটি সেটি নিতে চাইলো না। আদতে কি সেই খাবারটা বানাবার জন্য যে সময় টুকু লাগবে , সেই সময় টুকু অপেক্ষা
করব মত ক্ষমতাও তার নেই! এতটাই কী ক্ষুধার্ত সে ! অভিক বুঝতে পারে না। ক্রমে অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে।
অপর দিক থেকে ঠিক তখনই চয়ন ডেকে ওঠে – অভিক আয়।
সম্বিত ফিরে অভীকের ।
আস্তে করে এগিয়ে যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর টিকিট কাউন্টার এর দিকে।
সেখান থেকে দুটো ৩০ টাকার হল (hall) টিকিট কাটে ।
কিন্তু ভিক্টোরিয়ায় আর ঢোকা হয়ে ওঠে না।
মনের ভেতরটা হূ হূ করতে থাকে । সম্পূর্ণ
ভাবনাটা তখন যেনো সেই মেয়েটা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ক্রমে ভিক্টোরিয়ার টিকিট টা দুমড়ে
দলা পাকিয়ে ফেলে দেয় মাটির মধ্যে।
এভাবে নির্লিপ্ত
ভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে আকাশের দিকে । ভাবতে থাকে, কি এই উপহাস ! ভগবান যাকে দেয়,দুহাত ভরে, আর যাকে দেয় না ... এক
বেলারও কি....!!!!
No comments:
Post a Comment