Monday, June 13, 2022

BLIND DATE

ব্লাইন ডেট 



দিনটা আষাঢ়ের প্রারম্ভে | রোদ ঝলমলে না হলেও কিঞ্চিৎ স্ফটিকের ন্যায় অল্প বিস্তর সূর্যালোক ঠিকরে পড়ছে মাঝে মধ্যে কাহিনীর পূর্বে একথা বলি তথা একবিংশ শতকের পাঠক পাঠিকার আষাঢ় মাস ব্যাপারটা হয়তো ঠিক লাগতে নাও পারে । তবে কিছুটা সাহিত্যের স্বার্থে এটুকু স্বাধীনতার সাহিত্যিক এর প্রাপ্য । অতঃপর জুন কে বর্জন করা সঠিক বিবেচনা করলাম | এবার আসি কাহিনীতে । সকাল টা বেশ মনোরম | গল্পের নায়ক আজ একটু অন্য ভাবনায় | পূর্ব দিন একটু কেমন যেন বিষণ্ণ ছিল । তবে আজ সেই বিষণ্ণতা কম । গতকাল সায়ন কালে তার সখীটির সাথে মুঠো ফোনে হঠাৎ কিছু কথাপকথন হয় । সখীর আবদার সাবেকি উত্তর কলিকাতা তাকে ঘুরে দেখাতে হবে । তথাপি কি আর কর্তব্য । সেই মতো কাজ | পরদিন সকালে উঠে সেই প্রস্তুতি | কিন্তু হঠাৎ একটা টুং টাং রিংটোনে সম্ভীত এলো | ওপর প্রান্তে হালকা একটা নারী কন্ঠ- না অচেনা নয় সে স্বর । সে জানায় আজ সাক্ষাৎ তা স্থগিত করার জন্য । মনে একফোঁটা বিষণ্নতার কালো মেঘ উকি দেয় । প্রথমে সখাটি হালকা স্বরে ঠিক আছে বলে কথপোকথন সমাপ্ত করে । কিন্তু কিছু মুহূর্ত পরেই আবারও মুঠোফোন টা ডাক দেয় – টুং টাং টুং টাং । এবারে একটু যেন বেশি দেরী হয় উত্তর দিতে । কিন্তু হঠাৎ বিষন্নতার কালো মেঘটা যেন একটু সরে যায় । নতুন উন্মাদনায় ঠিক হয় যে তারা গোধূলির প্রাক্কালে সাক্ষাৎ করবে । অমনি শুরু হয় তার একটা ছোট্ট প্রস্তুতি । মধ্যান্ন ভোজন সাঙ্গ করে তারা যথারীতি বের হয় তাদের গম্ভাবিমুখে | দুপুর তখন ৩ টের কাঁটা সবে পার করেছে । যথারীতি তারা মেট্রো স্টেশনে দেখা করে । একজন এর পরনে কালো শার্ট আর জিন্স , আর অপরজনের আধুনিক ক্ষুরহীন জুতো মেরুন রঙ - এর পশ্চিমী অত্যাধুনিক পোশাক , খোলা রেশমি চুল , কাজল কালো চোখ অধরে হালকা গোলাপি আভা আর সাথে নেশাতুর আতর ; সব মিলিয়ে যেন এক মায়াময়তার সূচনা করেছে । মিতা কিছুমাত্র সম্ভিত হারালেও তৎক্ষণাৎ সামলে যথারীতি চলমান সিঁড়ি করে তারা যায় কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে , সেখান থেকে তারা যাবে শ্যামবাজার । বাতানুকূল মেট্রোতে চড়ে তারা শ্যামবাজার পৌঁছায় । মেট্রোয় ঠান্ডাটা বোধ হয় আজ একটু বেশিই মনে হচ্ছিল । কি জানিনা হয়তো হতে পারে মেট্রো কোচটা সদ্য হাল মডেলের বলে | যায় হোক যাক সে কথা । ঠান্ডা বেশি অনুভূত হলেও শেষে তারা শ্যামবাজার পৌঁছালো । পৌঁছে অত্যাধুনিক মুঠোফোনে রাস্তার নির্দেশ দেয় । পাঁচ মাথা নেতাজী মূর্তির বাম হাতের রাস্তা ধরে তারা সোজা এগিয়ে যায় । কিছুটা গিয়ে আবারও একবার বাঁ হাত পরে ডান হাতে নিবেদিতা পার্ককে পাশে রেখে পৌঁছায় সারদা মায়ের ঘাটে । বাগবাজার এলাকার মানুষ তাকে অবশ্য সারদা ঘাট বলে না । বলে মায়ের ঘাট । সেই নামেই যেন তার পরিচিতি বেশি । যায় হোক , ঘাটে পৌঁছানো মাত্রই ঝরে পড়ে অজস্র বারি ধারা । ছুটে তারা দাঁড়ায় মায়ের ঘাটের ঠিক ওপর প্রান্তে থাকা একটা অফিসের বারান্দার ছাউনিতে । বোধকরি তখন অফিসের কাজ কর্ম কিয়োংক্ষনের জন্য স্থগিত ছিল । কিছু পরে অবশ্য তারা খেয়াল করে অফিসের কাজের সময়ের তালিকা | না , থুড়ি । ওই সময় অফিস জনসাধারণকে পরিষেবা দিয়ে থাকে । এদিকে বারিধারা মুসল্কারে করে পড়তে থাকে । রাস্তায় কিছুটা জল ও জমে যায় । সেই সব দৃশ্য দেখতে দেখতে তারা কখনো বা খোশগল্পে মশগুল হয় , কখনো বা মুঠোফোনে রেডিও তে দু একটা গান শোনে । ক্রমে বৃষ্টি থামে যায় । তারা ঘাটের দিকে এগোয় । যুবকটির এই দৃশ্য চেনা । তবু আজ বৃষ্টি ভেজা ঘাট , সাথে তার সখীর যখন এ পরিবেশ ভালো লেগেছে সেটা জানতে পারে মনে মনে সে আপ্লুত হয় । অল্প হাসে মনে মনে । অথপর গঙ্গার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কিছু নিজস্বী ক্যামেরা বন্দী না করলে যে এ আসা বৃথা । অমনি ছবি ক্যামেরা বন্দী হতে থাকে । ছবি তোলা শেষ হলে তারা বের হয় আহিড়িটোলা ঘাটের দিকে । কিন্তু কিছুদূর গিয়ে বাগবাজার ঘাট দেখতে পায় তারা । সেই যেতু আহিড়িটোলা যাওয়া অবাঞ্চনিও | তারা একজনকে জিজ্ঞাসা করে যে এখান থেকে হাওড়া যাবার লঞ্চ পাওয়া যাবে কিনা । লোকটি জানায় যাবে ! দুটো লঞ্চ আর টিকিট কেটে তারা হাওড়ার লঞ্চ এ ওঠে । গোধূলি তখনও ঠিক ভাবে নাবেনি । আকাশটার লালচে ভাব দেখলে বোঝা মুশকিল যে কিছুক্ষন আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । যুবক যুবতী লঞ্চ এর ডেকের দিকে দাঁড়ায় । ভেজা লঞ্চের লোহা থেকে একটা সোঁদা গন্ধ ভেসে এসে মাদকতায় পরিবেশ তৈরি করেছে । লঞ্চ সবে মাঝ গাঙ পার করে কূলের দিকে অগ্রসর হয়েছে- এদিকে দুজন গল্পলাভে বেশ বিভোর ততক্ষনে । কিয়োৎক্ষন পরে বোধ করি একটা স্টাইলের মাত্রা দেবার প্রচেষ্টায় মেয়েটি তার মিতার জামার হাতা গুলো গুটিয়ে দেয় । গল্পের ছলে মেয়েটি তার মিতাকে বলে ; আচ্ছা এটা গাঙ না ! মিতা ঈষৎ হাসে মাত্র ।
মেয়েটি একটা মনস্কামনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে । মিতা সম্মতি সূচক ইঙ্গিত দেয় । মেয়েটি প্রবল আগ্রহের সাথে সাথে একটা কড়ি বের করে একমনে কিছু একটা ইচ্ছা জানায় গাঙে , কড়িটি গাঙে নিক্ষেপ করে মৃদু হাসে । যুবকটি জিজ্ঞাসা করে কি চাইলে ? মেয়েটি বলে নিজের জন্য কিছু কখনো চাইতে হয়নি । আর মনস্কামনা ! সে তো বলতে নেই যে বড় । যুবকটি মৃদু মুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে তার দিকে । এই দিকে লঞ্চ যে কখন তটে পৌঁছেছে সে তারা খেয়ালই করেনি । যথারীতি হাওড়া পৌঁছে এবার তারা টিকেট কাটে বাবুঘাটের । বাবুঘাট নেবে তারা সোজা গঙ্গার পার ধরে যাবে প্রিন্সেপ ঘাট । এমতাবস্থায় গঙ্গাসার ধরে তারা হাঁটতে শুরু করে । শুরু হয় নতুন গল্পের মোড় । এ কথা সে কোথায় এগিয়ে চলে তারা । মুগ্ধতায় যেন চারিদিকটা আবৃত করে ফেলে । এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এই ব্যস্ত দূষিত কলকাতায় যে থাকতে পারে তা এখানে না এলে কল্পনাতেও ভাবা সম্ভব নয় । ক্রমে বাবুঘাট কে পিছনে ফেলে তারা একে এগিয়ে চলে প্রিন্সেপ ঘাটের দিকে । পিছনে রয়ে যায় রিভার ট্রাফিক পুলিশ অফিস , রিভার স্পোর্ট ইনস্টিটিউট । আর পরে দূরে মিলিয়ে যায় নৌকা বিহার এর মাঝিদের ডাক “ বাবু যাবে " - অবশেষে প্রিন্সপঘাট মনুমেন্ট দেখা গেলে মিতা বলে ওই দেখ তোর সেই বাড়ি ! দুজলে হেসে ওঠে । রেল লাইন পার করে দেখা মেলে মনুমেন্টের । চোখ দুটো যেন জুড়িয়ে যায় । বৃষ্টি হবার জন্য মাটি তখনো ভিজে । মনুমেন্টের সামনে একটা ছোট নালা মিতা একটু মজার ছলে বলে- নে দেখে নদী টা পার কর । দুজনেই আবারও হেসে ফেলে । মেয়েটি বলে এটা নদী নয় মশাই , এটাকে বলে নালা । আরো বলে চল ওই আলোর কাছের চিয়ার টায় বসি । মাটি ভিজে না থাকলে হয়তো ঘাসেই বসতাম । ব্যাপারটা তাহলে বোধহয় নস্টালজিয়ার শেষ সীমানা ছাড়িয়ে দিত । যায় হোক শেষ পর্যন্ত গিয়ে ভেজা চিয়ারেই বসলো তারা । ঘড়িতে ততক্ষনে ৭:৩০ এর ঘন্টা পরে গেছে । বসে মেয়েটি দু চোখে মনুমেন্টের রূপ যৌবন যেন গিলতে থাকে । আর মনুমেন্টের পাশের দ্বিতীয় হুগলি সেতু যেন মুচকি হাসে । চলে কিছু খুনসুটি , আলাপচারিতা । আর মুহূর্তের লেন্স বন্দিকরণ । সময় গড়িয়ে চলে যেন মিসাইল গতিতে । মেয়েটি এবার উঠতে উদ্যত হলে মিতা বলে আর ক্ষণকাল না হয় রইলে ! মেয়েটি বলে তুমি বললে মিষ্টি লাগে , তবে তুই যেন কেমন বেশি আপন তথাসি প্রিন্সেসঘাটকে বিদায় জানিয়ে মেট্রোর জন্য তারা এগোয় এসপ্লানেড এর দিকে । ইডেন গার্ডেন আকাশ বাণী ভবন পেরিয়ে রাজ ভবন পার করে বাম পাশের রাস্তা ধরে হাটতে থাকে তারা । আঙুলে আঙুলে কথা বলে । এসপ্লানেড পৌঁছে লস্যি সনির রোল চিপস কফি ইত্যাদি তারা যায় । এরপর তারা কবি সুভাষ তার জন্য মেট্রো ধরে । প্রথম মেট্রো টি বাতানুকূল না হওয়ার জন্য মিতা সেটা ধরে না এই ভেবে যে পরের মেট্রো টি হয়তবা বাতানুকুল হবে কিন্তু কালক্রমে পরের মেট্রোটিও বাতানুকুল ছিল না । অগত্যা সেটা ধরেই তারা কবি সুভাষ এর দিকে যাত্রা করে । মেট্রোতে মিতা বসার জায়গা পায় না কিন্তু লেডিস সিটে মেয়েটি বসেলেও কিছুক্ষণ পর সে উঠে আসে মিতার কাছে । মেট্রোতে পুরুষের জায়গা না থাকলেও লেডিস সিটে জায়গা ছিল তাতে হয়তো মিতা বসলেও বসতে পারতো । তবে দুই রেল পুলিশের কর্কট চাউনিতে তা আর হয় না । মেট্রো গন্তব্যে পৌঁছালে রেল গাড়ি ধরার জন্য রেল স্টেশনে পৌঁছায় তারা । তবে আর তারা একদিকে যাবে না । এখানেই তাদের একসাথে চলা শেষ । আবার দুজনকে দুইদিকে পা বাড়াতে হবে । মেয়েটি মুঠোফোনে কিছু ব্যাস্ত হলে মিতা কৃত্রিম তর্জন করে । ক্রমে ক্যানিং লোকাল স্টেশনে পৌঁছায় । মিতা বলে পৌঁছে একটা ফোন করিস । মেয়েটি রেল গাড়িতে উঠে গিয়ে ভিড়ের মাঝে একসময় হারিয়ে যায় । ট্রেন ছেড়ে দেয় , দূরত্ব বাড়ে । উকি দেয় বিষণ্ণতা ।সেও ভার পথে পারি দেয় । ঝড় ওঠে । তবে প্রকৃতিতে নয় , মনের মাঝে । ফেলে আসা মুহূর্তকে হারিয়ে ফেলার । বাড়ি আসার পথে মুঠোফোনের কান্না ওপর প্রান্তে : - হ্যাঁ পৌঁছেছি । 
তুই- আচ্ছা ঠিক আছে । রাখছি ।
 - : সমাপ্ত :

No comments:

Post a Comment