দেব – একজন অভিনেতা, আবার মার্কেটিং জগতে একাধারে কৌশলী এক ধীমান চিন্তাবিদ। "ধুমকেতু" সিনেমার মাধ্যমে তিনি যেন প্রমাণ করলেন, কেবল অভিনয় নয়—একটি অতি সাধারণ সিনেমাকেও কীভাবে ব্যতিক্রমী ভাবে বাজারজাত করা যায়, তা বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ তাঁর থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
প্রচারণার মূল চাবিকাঠি ছিল এই বাক্যটি—"দশ বছর পর আবার দেব-শুভশ্রী জুটি, হয়তো শেষবারের মতো!" এই সংবেদনশীল আবেদনে দর্শকমন এতটাই আলোড়িত হয় যে, সিনেমার নিজস্ব কাঠামোগত দুর্বলতা দর্শকের আগ্রহকে স্তব্ধ করতে পারেনি। দর্শক হলমুখী হয়েছে, বুকিং ছিল হাউসফুল—এ যেন শুধুই ‘দেব-শুভশ্রী’ আবেগের জয়।
---
🎭 চিত্রনাট্য : কুয়াশায় ঢাকা কাহিনি
‘ধুমকেতু’র মূল গল্প বলার মতো নয়, বরং না-বলার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এক অলক্ষ্য ধারা। দুই ঘণ্টা এগারো মিনিটের এই চিত্রনাট্যে স্পষ্টতার এক রহিত প্রবাহ বিরাজ করে।
দেব দশ বছর নিখোঁজ—তিনি মৃত না জীবিত, কেউ জানে না। এক পর্যায়ে তিনি ছদ্মবেশে প্রত্যাবর্তন করেন একটি ‘মিশন’-এর অংশ হিসেবে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, কোন মিশন? কেন? কার জন্য?
চিত্রনাট্য কখনো প্রেমের গল্পের আভাস দেয়, কখনো বন্ধুত্বের, আবার কখনো বাবা-ছেলের সম্পর্কের ছায়া ফেলতে চায়—কিন্তু কোনটাই স্পষ্ট নয়। যেন এক মালভূমির মাঝখানে নোঙরহীন এক জাহাজের মতো দোদুল্যমান।
❌ দুর্বলতা যেখানে স্পষ্ট :
গল্পে ফাঁক অনিবার্য। ঘটনাবলি ঘটে যায়, কিন্তু কেন ঘটছে তার পেছনে কোনো ব্যাখ্যা নেই।
ভিলেনের চরিত্র অতি সরলীকৃত, নেই কোনও ব্যাকস্টোরি, নেই চরিত্রের গভীরতা।
সিনেমার শুরুতেই যেন আপনি অনুধাবন করতে পারবেন শেষ কী হতে চলেছে—এমন অনুরণন।
অতিরিক্ত গানের ব্যবহার সিনেমার গতি আরও শ্লথ করে তুলেছে।
চিত্রনাট্য মন্থর, ভাবনাশূন্য, ক্লান্তিকর।
---
🌟 যেখানে আলো আছে :
দুলাল লাহিড়ি তাঁর স্বল্প উপস্থিতিতেও অসামান্য অভিনয়ের নিদর্শন রেখেছেন।
রুদ্রনীল ঘোষ এই সিনেমার প্রকৃত প্রাণ। তাঁর আবেগপ্রবণ অভিনয় দর্শককে ভাবায়, দাগ কাটে হৃদয়ে। অনেকেই বলতেই পারেন—এটা ‘দেব’-এর সিনেমা নয়, বরং ‘দে-রু’র সিনেমা।
---
📝 সমাপ্তি মন্তব্য :
"ধুমকেতু" একদিকে যেমন সিনেমাটিক শিল্পের দীনতা প্রদর্শন করে, অন্যদিকে দেব-এর স্টারডম এবং প্রোমোশনাল বুদ্ধিমত্তার শিখরকে স্পর্শ করে। এর প্রচারে যে আবেগের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু সিনেমার অন্তর্বস্তু যদি দুর্বল হয়, তবে সেই আবেগ স্থায়িত্ব হারায়।
সার্বিকভাবে, “ধুমকেতু” দর্শকদের হৃদয় না ছুঁয়ে, আবেগের অস্থায়ী ঢেউ তৈরি করে মিলিয়ে যায় নিজের ধোঁয়াশায়—একটি অনুত্তীর্ণ সম্ভাবনার নাম হয়ে।
---
রেটিং (৫-এ): ⭐⭐ (২/৫)
দর্শনীয় শুধু রুদ্রনীলের জন্য।
---
No comments:
Post a Comment