চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পূজা – আলোর শহরে দেবীর মহোৎসব
চন্দননগর—হুগলির তীরে বসে থাকা ছোট্ট আলো-ঝলমলে এক শহর। আর এই শহরের প্রাণ, আবেগ এবং গর্ব—জগদ্ধাত্রী পূজা। দেবী জগদ্ধাত্রী এখানে শুধুই পূজিতা নন, তিনি এক অনুভূতি, এক ঐতিহ্য, এক অদ্ভুত আলোয় মোড়া উৎসবের নাম।
| রাণী মা |
শরৎ শেষে যখন বাতাসে শীতের মৃদু ছোঁয়া নামে, তখন চন্দননগরের প্রতিটি রাস্তায় রাস্তায় সাজ শুরু হয়। আলো, থিম, শিল্প, রঙ—সব একসাথে যেন এক চলমান স্বপ্ন তৈরি করে। এখানে পূজা মানে কেবল মন্ডপ দর্শন নয়, বরং রাত জাগা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরা, গঙ্গার ধারে বসে গল্প, আর সেই আলোর ঝাড়ের নিচে ছড়িয়ে থাকা শহরের উজ্জ্বলতা।
চন্দননগরের আলোর কারুকাজ
চন্দননগর আলোয় বিখ্যাত—এ সবাই জানে।
এখানকার লাইটিং শুধু সাজসজ্জা নয়; এটি কলা।
তারের পর তার, বাল্বের পর বাল্ব—শিল্পীরা জাদুর মতো তৈরি করে নেন বিশাল বিশাল চলমান লাইটের সেট। যেগুলো কখনও ইতিহাস বলে, কখনও পৃথিবীর ঘটনা, কখনও অথবা দেবীকে ঘিরে আধ্যাত্মিক কাহিনি।
রাত নামতেই শহর যেন অন্য রূপ নেয়—
মনে হয় যেন আকাশের নক্ষত্ররা নেমে এসেছে রাস্তায়।
মন্ডপ আর প্রতিমার রূপ
দেবীর মৃদু হাসি, সিংহের অহংকার, অশুরের পরাজয়—সব কিছুতেই এক মহিমা।
প্রতিটি প্যান্ডেলে থাকে থিমের গল্প, আর প্রতিটি গল্পেই থাকে সৃষ্টির নতুনত্ব।
অনেকের মতে, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার চাহনি যেন মায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে।
জগদ্ধাত্রী পূজার রাত জাগা
এই পূজায় দিন নয়, রাতই আসল সময়।
রাত ৮টা থেকে সকাল ৫টা—রাস্তায় মানুষের ঢল।
কেউ প্যান্ডেল দেখছে, কেউ সেলফি তুলছে, কেউ বালতি বালতি চা খাচ্ছে।
হাসি, আলাপ, আলো, গান, ঢাক—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত প্রাণের উচ্ছ্বাস।
ভাসান – চন্দননগরের হৃদয়ের স্পন্দন
পূজা শেষ হয় না পুজো দিয়ে—শেষ হয় ভাসান উৎসব দিয়ে।
এ যেন শহরের সবচেয়ে আবেগময় রাত্রি।
গঙ্গার ধারে বাঁধে আলোর সারি, ঢাক, উলুধ্বনি, ‘জয় মা’-র উচ্চারণ।
মা বিদায় নেন, কিন্তু রেখে যান আলোয় ভরা স্মৃতি আর ফিরে আসার অপেক্ষা।
শেষ কথা
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা শুধুমাত্র উৎসব নয়—এ এক অনুভূতি, ঐতিহ্য, শিল্প আর মানুষের মিলন।
যখন তুমি একবার রাতে আলোর নদী বেয়ে এই শহর ঘুরে দেখবে—
তখন বুঝবে, কেন হাজার মানুষ এই পূজার জন্য অপেক্ষা করে সারাবছর।
জয় মা জগদ্ধাত্রী 🙏✨
চল এবার আলোতে ভেসে যাই!
No comments:
Post a Comment